Published on

বলিউড: মিথ, বাস্তবতা এবং ছলনা (প্রথম পর্ব)

ভারতের তিনটি ব্যবসা খুব জোরেশোরে চলে ওয়ার্ল্ডওয়াইড। ১/ বলিউড; ২/ ক্রিকেট; ৩/ টুরিস্ট ব্যবসা। . আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হল বলিউড। আজ আলোচনা হবে কীভাবে এটি আমাদের মাঝে পর্নোগ্রাফি, সমকামীতা, অযাচার আর নানা ধরণের মতবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং আলোচনা হবে এদের ইনসাইডারদের বিকৃতি নিয়ে। . বলিউডের একটি মুভি বা একটি আইটেম সং-ই একেকটা পর্নোগ্রাফির সমান। মানসিক বিকৃতি আর অবাধ ওয়েস্টার্ন কালচারের সমাবেশ এই বলিউডকে করেছে রঙিন, পৌছে দিয়েছে অনন্যতায়। স্ক্রিপটেড অ্যাওয়ার্ড শো, শত শত কোটি টাকার ব্যবসা, ইসলামফোবিয়া, সেক্যুলারিজম, সেক্সিজম, প্লেজিয়ারিজম, সারিয়ালিজম, লিবারেলিজম, হিউম্যানিজম, ম্যাটার‍্যালিজমের পসরা সাজিয়ে নিয়ে গঠিত এই বলিউড শোবিজের নামে প্রতিটি স্তরের মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে সব ধরণের বিকৃতি। এই গড্ডালিকায় গাঁ ভাসানো মানুষেরা জানে না বা জানতে চায় না এর ‘বিহাইন্ড দ্যা সিন’ কারসাজি। এর অদেখা জগত সম্পর্কে তারা মোটেও ওয়াকিবহাল নন। কারণ এটা তাদের কাছে কেবল বিনোদনের একটি অংশ মাত্র। . এই বলিউড আমাদের যুবক-যুবতীর মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, নিজের শৈশব জীবনের নস্টালজিয়া হচ্ছে বন্ধু-বান্ধবের সাথে বিড়ি টানা, গালাগালি করে কথা বলা, পর্ন দেখা, মাদকাসক্ত হওয়া, রাফ চলাফেরা করা, প্রেম করা ইত্যাদি। এগুলো তাদের পুশ করা এজেন্ডা। . যেকোন জায়গায় কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ণ করার একটা মৌলিক দিক হল, সেই জায়গায় কিছু মানুষকে যারা খ্যাতির জন্য নিজের আদর্শকে বিলিয়ে দিয়ে সমাজে নোংরামি আর বিকৃতি আমদানি করতে পারে, তাদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে সেই এজেন্ডার প্রচারক বানিয়ে দেওয়া। পরবর্তিতে এই প্রচারকদের মাধ্যমে এজেন্ডা বাস্তবায়ণ হয়ে গেলে সেখানে এই এজেন্ডার ফ্রি ফলোয়ার তৈরি হয়ে যায়। এদের টাকা দেওয়া লাগে না। ওই যে, যাদেরকে টাকা দিয়ে এজেন্ডার প্রচারক বানানো হয়েছিল তাদের আদর্শকে একদল লোক সত্য বলে ধরে নেয়। . এই যে সমকামী এজেন্ডা, এর টেকনিকাল ইমপ্লিমেন্ট এইটাই। আগে সমকামীতার প্রচারকরা মানুষের মননে-মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, সমকামীরা সমাজে নির্যাতিত, অবহেলিত! এখন এদের জন্য সিম্পেথি দেখিয়ে মানুষকে সমকামীতার সমর্থক বানানো হচ্ছে, সমকামীতাকে গ্লরিফাই ও সেলিব্রেইট (প্রাইড মান্থ এর একটি দিক) করা হচ্ছে যেন এটি খুব ভালো জিনিস এবং এটি বর্তমানে চলমান একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় নেক্সট জেনারেশনের লোকদের টাকা দিতে হচ্ছে না। বরং তারা একে মানবিকতার একটি অংশ বা দিক মনে করেই এদের সমর্থন করে যাচ্ছে! . এই একই ট্যাকটিক বলিউড ভারত উপমাহাদেশে খেলেছে। বলিউড আমাদের উপমহাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে পর্নোগ্রাফি, সমকামীতা, লিভ-ইন বা লিভ-টুগেদারের (এই ইস্যুগুলো নিয়ে লিটারেলি তারা মুভি তৈরি করেছে) মত অসামাজিক ও নোংরা সংস্কৃতির বিষবাষ্প। এরা নিজেদের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বলে কিন্তু কন্টেন্টের নামে এরা আমদানি করেছে বিজাতীয় ও ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতি, লিগালাইজ করছে অবাধ যৌনাচার! কিন্তু আমরা না বুঝেই বলিউড বন্দনায় মেতে উঠেছি! . রিসেন্টলি সুশান্ত সিং মারা যাওয়ায় বলি পাড়ায় রীতিমত ঝড় উঠেছে। নেপোটিজম এবং সেক্সিজম নিয়ে বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। মিটিওরিক স্টারডম পাওয়া এই অভিনেতা কেনই বা আত্মহত্যা করল? নিছক প্রেম ভালোবাসা? আমার বিশ্বাস হয়না। তার নিজের যেমন টাকা পয়সা আর খ্যাতি-যশ ছিল, চাইলেই সে সহজে অন্য যে কারো সাথে রিলেশনে যেতে পারত। . তবে আমি আপনাদেরকে কিছু ফ্যাক্ট দিতে চাই যেগুলো ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এই অভিনেতার মৃত্যুর কন্সিকিউয়েন্সে। . সুশান্তের মারা যাওয়ার আগে তার সম্পর্ক ছিল রিয়া চক্রবর্তী নামের আরেক অভিনেত্রীর সাথে। কিন্তু সেই অভিনেত্রীর একটি স্কেপটিকাল রিলেশন আছে ষাটোর্ধ বলি-বিখ্যাত ডিরেক্টর মহেশ ভাটের সাথে যেই লোকটি মুভির নামে অসংখ্য পর্নোগ্রাফিক ফিল্ম উপহার দিয়েছে তার দর্শকদেরকে। সে সুশান্তের মৃত্যুর কিছুদিন পুর্বে বলেছে যে, সুশান্ত ছেলেটা পাগল হয়ে যাচ্ছে এবং সে নাকি খুব শীঘ্রই সুইসাইড করবে এবং আসলেই কিছুদিন পর সে সুইসাইড করে। তবে সুশান্তের ফরেনসিক রিপোর্টে, বেডশিটে কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি কেবল অপরিচিত কারো বাম হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া। তাই একে অনেকেই সুইসাইড না বলে হত্যা বলতে চাচ্ছেন! . সে যাইহোক, এত লম্বা প্যাঁচাল কেন পাড়লাম? উদ্দেশ্য হল এই মহেশ ভাট। এই লোকটা তার নিজের বড় মেয়েকে কিস করেছে ও নিজের এই মেয়েকেই বিয়ে করতে চাচ্ছিল এবং সে এটা মিডিয়ার সামনে স্বীকারও করেছে! কতটা পার্ভাট হলে কেউ নিজের মেয়েকে কিস করে ও বিয়ে করতে চায়? . চলবে ইনশা আল্লাহ … . টীকাঃ . ১] ইসলামফোবিয়াঃ ইসলামবিদ্বেষ। ইসলামের বিভিন্ন বিধান নিয়ে কটুক্তি করা। . ২] সেক্যুলারিজমঃ ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদ। ধর্ম আর রাষ্ট্র-রাজনীতিকে আলাদা মনে করা। এর মূল কারণ ছিল, ইউরোপে খ্রিষ্টান চার্চের মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতন যা থেকে বাঁচতে এই মতবাদের উৎপত্তি হয়। এর মূল ধারনা হল ধর্মের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ ইসলামি শরিয়াহ’র উদ্দেশ্য হল আল্লাহ’র জমিনে আল্লাহ’র আইন বাস্তবায়ন করা। . ৩] প্লেজিয়ারিজমঃ লেখা চুরি। অন্যের সাহিত্যকর্ম বা রচনা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া। . ৪] লিবারেলিজমঃ উদারনৈতিকতা। সহজভাষায় বললে, সবকিছুতে তারা উদারতা খোঁজে। ইসলামের নানা বিধান নিয়ে তাদের সমস্যা, কারণ তাদের মতে এগুলোতে উদারতা নেই। . ৫] হিউম্যানিজমঃ মানবতাবাদ। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ এই টাইপের বিশ্বাসী। তারা ধর্মের উপরে মানবতাকে স্থান দেয়। অথচ, এই মানবতার নেই কোনো গাইডলাইন, নেই কোনো মূলনীতি। যেমনঃ ধরুন ‘ক’ ব্যক্তি ‘খ’ কে হত্যা করল। এটা মানবতাবিরোধি। এতে ‘খ’-এর পরিবারের অনেক ক্ষতি হল। তাই, তারা সরকারকে ‘ক’-এর হত্যার দাবি জানালো এবং সরকারি নিয়মানুযায়ী তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হল। এখন ‘ক’-কে হত্যা করা কী মানবতাবিরোধী নয়? আর হত্যা না করা হলে তা-কি ‘খ’ এবং তার পরিবারের প্রতি না-ইনসাফি নয়? মানবতাবিরোধী নয়? তাই মানবতার সঙ্গার্থ একেক প্রেক্ষাপটে একেকজনের কাছে একেকরকম। তাই, এই মানবতা বিশালভাবে ডিফায়েন্ট এবং ইনডিফিনিট! তাই, এটা নিয়ে জানতে Iftekhar Sifat ভাইয়ের এই লেখাটি পড়তে পারেন [https://bit.ly/2YCJN9C]। . ৬] ম্যাটারিয়ালিজমঃ বস্তুবাদ। জীবনের সুখ-শান্তি, সাফল্য বস্তু’র মাঝেই যেমন, গাড়ি, বাড়ি, নারী, টাকাপয়সা ইত্যাদিতে নিহিত আছে বলে মনে করা।

. লেখক: Mashud Ur Rahman . #SaveFoundation_প্রবন্ধলিখন_প্রতিযোগিতা_২০২০