by lostmodesty | Jun 21, 2020 | ব্লগ
নারীপুরুষের মেলামেশার সীমানা কেমন হওয়া উচিত?
প্রশ্নটা নিয়ে ভালোই বিতর্ক শুরু হলো ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে। মন পরিষ্কার থাকা, ভালো নিয়্যাত থাকা, উদ্দেশ্য ভালো হওয়া কি যথেষ্ট? নাকি শরীয়াহর দিকনির্দেশনা আর সীমারেখাও মেনে চলতে হবে?
‘আমাদের বয়স তো এখনো কম’, একজনকে বলতে শোনা গেল।
‘কোন বয়সটা কম, কোনটা বেশি, সেটা কিসের ভিত্তিতে ঠিক হবে?
ম্যাচিউরিটি এসেছে কি না সেটার মাপার মাপকাঠি কী? বরং প্রশ্ন হলো, আমরা কি এখন শরীয়াহর দৃষ্টিতে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন? বালেগা?’
‘যদি মন পরিষ্কার থাকে তাহলে ছেলেমেয়ের মেলামেশায় সমস্যা কী? এটা তো কোনো পাপ না! ’
ঠিক-বেঠিক কে ঠিক করবে? সমাজ, সংস্কৃতি, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র? নাকি শরীয়াহ?
‘আরে তুই তো হুজুরনীদের মতো কথা বলছিস!’
.
বিতর্ক চলতেই থাকল।
বিষয়টা স্কুল প্রিন্সিপালের কানে গেল। তিনি ক্লাসে আসলেন। তবে আসার কারণ ওদের বললেন না। ধীর পায়ে ক্লাসে ঢুকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
.
‘আচ্ছা মেয়েরা বলো তো, এই টেবিলটা বড় না ছোট?’
‘ছোট!’, বলল একজন।
‘না, বড়!’ ওর কথার রেশ মিলিয়ে যাবার আগেই আরেকজন চেঁচিয়ে বলল ।
‘আরে না, টেবিলটা মাঝারি সাইজের’, সবজান্তার সুরে বলে উঠল তৃতীয়জন।
মুচকি হেসে প্রিন্সিপাল এবার প্রশ্ন করলেন, ‘তোমরা দেখি এখানেও একমত হতে পারছ না। একমত হতে হলে কী দরকার বলো তো?’
‘ছোট আর বড়-র সংজ্ঞা। কতটুকু হলে ছোট, কতটুকু হলে বড়, সেটা জানতে হবে।’
‘চমৎকার। আর সংজ্ঞার জানার পর কী দরকার?’
‘একটা মাপকাঠি। যা দিয়ে মাপা যাবে, তুলনা করা যাবে।’
‘সুন্দর বলেছ। এই কথাগুলো শুধু টেবিলের জন্য না; বরং আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যদি কোনো সংজ্ঞা ঠিক করা না থাকে, কোনো পার্থক্যকারী না থাকে এবং কোনো মাপকাঠি না থাকে, তাহলে কোনোদিন, কোনো কিছুতেই আমরা একমত হতে পারব না। এখন প্রশ্ন হলো, কোন সেই মাপকাঠি, যা দিয়ে আমরা বিচার করব? মাপব?’
‘সমাজ, সংস্কৃতি, রীতিনীতি’,
‘কিন্ত যখন সংস্কৃতি আর সমাজের রীতিনীতি বদলে যাবে?’
জবাব দিল না মেয়েটা।
‘আমাদের বাবা-মা যা করবেন, যা শেখাবেন সেটাই আমাদের
মাপকাঠি’, আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল আরেকজন।
‘কিন্তু বাবা-মা যদি একমত হতে না পারে? যদি তারাও তোমাদের মতো তর্ক শুরু করে?’
দ্বিতীয় মেয়েটাও চুপ হয়ে গেল।
‘বিবেক।’
‘সব মানুষের বিবেক কি একরকম?’
‘না।’
‘তাহলে কার বিবেককে আমরা মাপকাঠি হিসেবে নেব?’
এবার তৃতীয় মেয়েটাও চুপ।
‘যুক্তি?’, ঠিক উত্তর না, অনেকটা প্রশ্নের মতো শোনাল এবার।
‘কিন্তু যেটা তোমার কাছে যৌক্তিক সেটা তো আরেকজনের কাছে যুক্তিসম্মত নাও মনে হতে পারে, তাই না?’
‘হ্যাঁ।’
.
‘আচ্ছা এই যে তোমরা বলছ, সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি, পিতামাতা, বিবেক, যুক্তি ইত্যাদিকে মাপকাঠি হিসেবে নিতে, তোমরা কি নিশ্চিত এগুলো তোমাকে সঠিক উত্তরটা দিতে পারবে?’
এবার পিনপিতন নীরবতা নেমে এল ক্লাসে। সবাই ভাবছে।
যে মেয়েটাকে হুজুরণী বলা হচ্ছিল এবার সে মুখ খুলল। অনুচ্চ, শান্ত কিন্তু নিশ্চিত গলায় বলল,
‘শরীয়াহ। মাপকাঠি হবে আল্লাহর দেয়া শরীয়াহ।’
‘ঠিক! মাপকাঠি হলো শরীয়াহ। শোনো মেয়েরা, আমরা মুসলিম। আর মুসলিম হবার অর্থ কী? এর অর্থ হলো আমরা প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তের কাছে নিজেদের সমর্পণ করি। আল্লাহ বলেছেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّـهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী উক্ত নির্দেশের ভিন্নতা করার কোনো অধিকার রাখে না। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে সে স্পষ্টতই সত্য পথ হতে দূরে সরে পড়ল। [তরজমা, সূরা আল-আহযাব, ৩৬]
.
এবং তিনি বলেন,
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّـهِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّـهُ رَبِّي عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ
আর যেকোনো বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই ওপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই। [তরজমা, সূরা আশ-শূরা, ১০]
এবং তিনি বলেন,
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّـهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
যদি কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রাসূলের (নির্দেশের) দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাকো; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা। [তরজমা, সূরা আন-নিসা, ৫৯]
.
শোনো মেয়েরা, মানুষ ভুল করে। আমাদের ভুল হয়ে যায়। আমরা হয়তো সব সময় শরীয়াহর বিধান মেনে চলতে পারি না। ভুল হওয়াটা সমস্যা না। কিন্তু আমাদের স্পষ্টভাবে মনে রাখতে হবে আমরা যা করছি সেটা ভুল। শরীয়াহর বিধান সঠিক। আমি হয়তো কোনো একটা ক্ষেত্রে সেটা পালন করতে পারিনি, কিন্তু আমার স্বীকার করতে হবে যে আমি যা করছি সেটা ভুল। শরীয়াহ যা ঠিক করে দিয়েছে সেটাই ঠিক।’…
.
আল্লাহ এই উম্মাহর মধ্যে এমন শিক্ষকের সংখ্যা বাড়িয়ে দিন, যারা আমাদের সন্তানদের শরীয়াহর কর্তৃত্ব সম্পর্কে শেখাবে এবং শরীয়াহকে গ্রহণ করতে শেখাবে একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে।
.
বই: আয়নাঘর
লেখক: ড. ইয়াদ আল-কুনাইবি
by lostmodesty | Jun 1, 2020 | ব্লগ
এই লকডাউন আমাদের অনেক কিছুই বোঝার ও উপলব্ধি করার সু্যোগ দিয়েছে। মুক্তমনাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ” My life, my Rule ” এর অসারতা। কি অবাক হচ্ছেন!
সেকুলার মিডিয়া ও ফেসবুকে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রকোপে বা কল্যাণে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে জানাযার খবর বা বহিঃদেশের মধ্যে ইন্ডিয়া তে তাবলীগ জামাত নিয়ে coronazihad নিউজ টা তো কারো অজানা নয়। কিন্তু উন্নত বিশ্ব ও সভ্যতার ধারক বাহক দেশগুলো মৃত্যু ঢল থাকার পড়েও তাদের anti -lockdown প্রটেস্ট আমাদের চোখে পড়তেছে না।
.
মিশিগানে মানুষরা আর্মড হয়ে প্রটেস্ট করতেছে, বন্দুক নিয়ে ঘুরতেছে। তারা আর বাসায় থাকবে না। সবাই জার্নালিস্ট দের বলতেছে-
” You are the virus” [1]
Idaho স্টেট এ মানুষ অপেন স্ট্রীটে প্রটেস্ট রত অবস্থায় হুংকার দিচ্ছে ” Freedom over Fear ” [2]
Pennsylvania এর উন্নত জায়গায় কথা শুনলেই আমাদের লোম দাড়িয়ে যায় টাইপ অবস্থা। সেখানের Harrisburg এ অপেন স্ট্রীটে হাজার মানুষের সামনে সবুজ ট্রাকে শোডাউন হচ্ছে ” Jesus Is my vaccine ” [3]
Virginia স্টেট এর শিক্ষিত মানুষজন মনে করছে এই লকডাউন তাদের মানবিক অধিকারে আঘাত হানতেছে। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা হচ্ছে। তাই তারা হুংকার দিয়ে ” pro-choice” স্লোগান দিচ্ছে –
“My body, My choice “[4]
বিজ্ঞানপুরীর মানুষজন anti vaccination এর টি শার্ট পরে প্রটেস্ট এ নেমে পড়েছে এবং জানায় তারা বিজ্ঞানী আর হেলথ কেয়ারদের বিশ্বাস করে না। Austin, Texas এ মানুষ “Fire Fauci ” করে করে চিক্কুর পেড়ে গলা ভেংগে ফেলছে। যে কিনা Dr Anthony Fauci, director of the National Institute of Allergy and Infectious diseases. [5]
Lansing, Michigan প্রটেস্টারদের টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হইলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। ” Give me work, Not money, I hear that ” [6]
.
এরকম শখানেক নিউজ তুলে আনা যাবে। Google করলেই হাজার ছবি আর বড় বড় নিউজের লিংক পেয়ে যাবেন৷এইখানকার প্রথম টা বাদে সবগুলোই খানিকটা পুরনো এপ্রিল মাসের যখন ২০০০-২৫০০ মানুষ মারা যাচ্ছিল একদম পিক পয়েন্টে। তখন সেখানকার মানুষের আচরণ। কি ভাবছেন US এ অনেক মানুষ তাই এরকম কাজ ঘটবেই। এটা কিছু না। US এর উপর আমাদের ঈমান আসলেও অনেক শক্ত। আসেন অন্য দেশগুলোর অবস্থা দেখি।
.
৩৩০০০ মৃত্যুর মুখ দেখা UK এর স্বাধীনতাকামী মানুষজন লিফলেট বিলাচ্ছে “bring a picnic, some music and [have] some fun and say yes to life”[7]
অনেকে মনে করতেছে এইটা ফেক ভাইরাস এবং বিল গেটস এর ষড়যন্ত্র। অনেকে আফসোস করতেছে এই জেনারেশন এ এসে আমাদের কেন ফ্রিডম নাই [8]
Scotland এ সভ্য সমাজের মানুষেরা protest এর জন্য সবাই মিলে “Group hug ” করতেছে। No more Lockdown, No more House Arrest করে করে চেচাচ্ছে। [9]
এরকম আরো রংতামাশার পসরা বসিয়ে রেখেছে Uk এর প্রটেস্টাররা। পোলান্ডের মানুষ জড়ো হয় তারা লকডাউন মানবে না, তাদের অনেকের চাকুরী আছে জার্মানিতে তারা সেখানে যাবে। [10]
Ivory coast এর মানুষজন হেলথ অফিশিয়াল এতটাই কম বিশ্বাস করে যে তারা টেস্টিং কিট সেন্টার ধ্বংস করে দিছে আর ভাবতেছে তারা কাল তাই তাদের কিছুই হবেনা। [11]
এছাড়াও ইন্ডিয়া, বেলজিয়াম,ইরাক, লেবানন, জার্মানি সহ আরো অনেক দেশে এইরকম প্রটেস্ট দেখা যাচ্ছে এই সময়ে। [12]
.
এত কাসুন্দী কেনই বা টানলাম। এরা তো আসলে মেজর portion না৷ এদের কারণে পুরা পৃথিবীর লকডাউন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে না। তাই তো!!
কিন্তু মানবতাবাদী ও হিউমান রাইটস এর ফেরিওয়ালা দের তো এইসব প্রটেস্ট এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার কথা ছিল। তাদের খুব প্রিয় ডায়ালগ ” My body, My choice “। তাহলে তারা কেন গর্জে উঠছে না। ও মাস্ক পড়তেছে না, বাইরে ঘুরতেছে না, ও মরবে। আমি তো বাসায় আটকা আছি সেফ আছি। দুইটা মতই আমাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত৷ মানুষকে বাইরে গেলে আটকানোর অধিকার আমাকে কে দিয়েছে!! তারা কিন্তু সরাসরি ভাবে মানুষের ক্ষতির কারণ না৷ হতে পারে পরোক্ষভাবে। ওদেরও ফিলিংস আছে, ওর মন আছে, মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে দেহ নিয়ে বেচে থেকে কি লাভ। অনেক গবেষণায় বলছে এই লকডাউনের জন্য US এর ৭৫০০০ মানুষ আলকোহল ও সুইসাইডে মারা যাবে। [13]
.
কই এরকম আবেগ কপচানো মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এক মিডিয়া এসব জিনিসে ফুয়েল দিচ্ছেনা, গভার্নমেন্ট সাথে নাই। আর তাদের নিজেদের গায়েও আগুন ভাপ টা পড়তেছে।সবচেয়ে বড় কথা তারা কেউই নৈতিকভাবে সৎ না। Individualism আর Materialistic মানুষজন হঠাৎ সামাজিক ভাবে বাচার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
” আমি তো কারো ক্ষতি করছি না ” এইসব পাবলিকদের এই বিষয়ে হ্যারিকেন দিয়ে খুজলেও পাওয়া মুশকিল।
Passive smoking এর মাধ্যমে কত মানুষ ফুসফুসের রোগী হয়ে যাচ্ছে তা কি কোনো ক্ষতি না?
.
উপরের আন্দোলন গুলার সাথে ঠিক কয়েকদিন আগের LGBTQ আন্দোলনের খুব সুন্দর একটা মিল পাওয়া যায় আদর্শিকভাবে । সমকামিতা এবং তার অবাস্তব সাংসারিক জীবন যে সামাজিক বন্ধন নষ্ট করে দিচ্ছে এই ব্যাপারে কোনো আলাপ তো নেই৷যেখানে এইটার জীনগত কোনো প্রভাব নেই,[18] এইটা কেবল মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং শিশুকাম, পশুকামের মতো যৌন বিকৃতি। [15] (বিস্তারিত জানতে পড়ুন, দারুল ইহদার ‘অভিশপ্ত রংধনু’) ।
.
তারপরেও উন্নত দেশে আমাদের বাচ্চা কাচ্চাদের জোর করে শেখানো হচ্ছে এইটাই স্বাভাবিক। এই শিক্ষা হয়ে গেছে আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক!!! এইটা সবাই জানে ছোট বয়সের শিক্ষার প্রভাব জীবনে দৃড়ভাবে থাকে আর তখনকার শিক্ষাকেই মানুষ সত্য বলে মেনে নেয়। এই হচ্ছে ফ্রিডম অফ চয়েসের নমুনা।
সমকামীদের বাচ্চা কাচ্চাদের মানসিক অবস্থা কি হয় তা নিয়ে আমরা কেউ ভাবিনা। তাদের অধিকাংশ STD, piles হয়ে কাতরাচ্ছে কিংবা pedophile হয়ে যাচ্ছে তার কোনো খোঁজ নেই।
.
আসেন আমাদের দেশের কথাই কিছু বলি না হয় – Lifespring এর কিছু কেইস। [17]
“আমার হাজব্যান্ড Bi-sexual। ও যেসব ছেলেদের সাথে এসব করে তাদের একটা নিজস্ব গ্রুপই আছে। আমার বিয়ের ৮ বছর পর আমি এটা জানতে পেরেছি। আপা আমি কেমন করে সহ্য করবো বলেন? আমার ঘেন্নায় মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছা করে। আমাদের ঘরে দুইটা বেবি। ওদের মুখের দিকে তাকায় দাঁত কামড়ে পড়ে থাকি। কাকে বলব? কে বিশ্বাস করবে।”
-এই পুরো পরিবার ধ্বংস এবং দুইটা ফুটফুটে বাচ্চার দায় কি পড়তেছে কারো গায়ে। ঐ লোক তো কাউকে ক্ষতি করেনি। করেছে কি?
.
“আমার হোস্টেলে অনেকেই হোমো-সেক্সুয়াল। আমিও অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আগে আমার মেয়েদের দেখে এক্সাইটেড লাগতো। কিন্তু ৪ বছর ছেলেদের সাথে করতে করতে এখন মেয়েদের দেখে তেমন ফিল আসেনা। কিন্তু আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই!”
– এর স্বাভাবিক জীবনকে অস্বাভাবিক করতে পরিবেশ কি দায়ী নয়। এই দায় কে নেবে?
.
“আমি Foot Fetish। আমার কালেকশনে ২০০০+ মেয়ের পায়ের ছবি আছে যেগুলো দেখলে আমি সেক্সুয়ালি এক্সাইটেড হই। মেয়ে দেখলেই হামলে পড়তে মন চায়। বউকে অত্যাচার করে ফেলি ।”
এই ছেলেও খালি পর্নোগ্রাফি দেখত কারোর ক্ষতি করার নিয়ত ছিল না।
.
“প্রতিরাতে আমাকে মেরে মেরে তারপরে সে সেক্স করে। আমি ব্যথায় চিৎকার না করলে সে নাকি এক্সাইটেড হয়না! ওর অনেক টাকা। আমি গরীব ঘরের মেয়ে। আমাকে বাবা-মা বলে মুখ চেপে এখানে পড়ে থাকতে!”
.
কিন্তু তারপরো আমরা বলব পর্নোগ্রাফি একটা শিল্প, স্রেফ অভিনয় আর ধর্ষণ কমানোতেও এর ভূমিকা রয়েছে!
কুকুর কিংবা অন্য পশুর সাথে [14] সংগম করে এসে বাবা হিসেবে সে ছেলেকে কি নৈতিক শিক্ষা দিবে! কিন্তু তাকে মানা করতে গেলে বা সংশোধন করানোর জন্য এগুলে মানবতাবাদী সবাই তেড়ে আসবে ” Don’t Judge “.
.
মানবতাবাদীরা মুখে কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে তাদের কার্যহাসিল করবে এবং তাদের পুজিবাদি চিন্তার বাস্তবায়ন ঘটাবে। কিন্তু এইটার দায়ভার নেওয়ার সময় হাত পা গুটিয়ে পালাবে৷ সবশেষে এই আজাবের ফল ভোগ করতে হচ্ছে পরিবার এবং কাছের মানুষদের। এই জ্বালা ভুক্তোভোগী ছাড়া কেউ টের পাচ্ছে না।
এই মানবতাবাদীদের মতে মানবিক বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ ও বিশ্বাস পুরোপুরি পরিবেশের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এইখানে নৈতিক মূল্যবোধ বা সার্বজনীন সত্যের কোনো স্থান নেই।
তাই এদের ব্যাপারে Dr Devid Ray Griffin বলেছেন, বস্তুবাদ ও ইন্দ্রিয়বাদ (sensationalism) যখন নাস্তিকতার সাথে সমন্বিত হয় তখন একটি নিয়ন্ত্রণবাদী (জড়), আপেক্ষিক ও শুন্যবাদী (nihilistic) দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে যেখানে জীবনের চূড়ান্ত কোনো অর্থ নেই [16]
.
সামাজিকভাবে আমরা এদের স্টান্ডার্ড কে অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত, সামাজিকভাবে এমনিতেও চারিদিকে পচনের দুর্গন্ধ ছড়ানো শুরু করেছে। এখন তাই আমাদের উচিত সবাইকে নামায, ইবাদতের সাথে সাথে বেশী বেশী পরিপূর্ণ ইসলামি জীবনব্যবস্থার প্রতি দাওয়াত দেওয়া। নৈতিকতার মানদন্ড হিসেবে আল্লাহর মানদন্ড কে দৃড়ভাবে আকড়ে ধরা। কারণ আজকে অন্যায়কে পার্সোনাল ব্যাপার বলে ইগনোর করলে হয়তো কালকে সেটা আপনার ঘরেই চর্চা করা হবে। তখন আসল দূর্গন্ধ টের পাবেন। তাই আগেই সচেতন হওয়া উচিত এবং অন্যায়কে অন্যায় বলেই আখ্যায়িত করা উচিত।
.
শেষে কোরআনের আয়াত দিয়ে শেষ করছি
اَفَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ وَاَضَلَّهُ اللّٰهُ عَلٰی عِلۡمٍ وَّخَتَمَ عَلٰی سَمۡعِهٖ وَقَلۡبِهٖ وَجَعَلَ عَلٰی بَصَرِهٖ غِشٰوَةً ؕ فَمَنۡ یَّهۡدِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اللّٰهِ ؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ
তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছো, যে তার প্রবৃত্তিকে তার উপাস্য বানিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কানে ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তার চোখের ওপর একটি আবরণ লাগিয়ে রেখেছেন। অতএব, আল্লাহর পরে তাকে আর কে পথ দেখাবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সুরা জাসিয়া ঃ২৩)
.
এরপরো কি আমরা উপদেশ গ্রহণ না করেও আল্লাহর হুকুমের উপর প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দিব!
_____
রেফারেন্স-
[1] https://www.washingtonpost.com/nation/2020/05/15/noose-fight-coronavirus-protest/
[2] https://www.youtube.com/watch?v=2CfxNRV3GHQ
[3] https://twitter.com/miguelmarquez/status/1252262768591491072?s=19
[4] https://wset.com/newsletter-daily/gallery/groups-plan-to-protest-va-lockdown-in-richmond-thursday
[5] https://twitter.com/mannyNYT/status/1251564861257113602?s=19
[6] https://www.youtube.com/watch?v=4goSjEsJKuA&feature=youtu.be&t=344
[7] https://www.independent.co.uk/news/uk/home-news/coronavirus-lockdown-protests-uk-london-hyde-park-5g-conspiracy-theories-a9518506.html
[8] https://news.sky.com/story/coronavirus-arrests-in-hyde-park-as-lockdown-protesters-denounce-fake-virus-11989409
[9] https://www.standard.co.uk/news/uk/london-protest-coronavirus-lockdown-scotland-yard-a4430186.html
[10] https://www.reuters.com/article/us-health-coronavirus-cross-border-worke/hundreds-protest-against-lockdown-at-polish-german-border-idUSKCN2270BE
[11] https://www.bbc.com/news/world-africa-52189144
[12] https://www.factcheck.org/2020/05/u-s-isnt-the-only-country-with-lockdown-protests/
[13] https://medium.com/@ariadnelabs/social-distancing-this-is-not-a-snow-day-ac21d7fa78b4
[14] https://metro.co.uk/2017/04/13/the-dark-truth-about-bestiality-parties-6570714/?ito=article.amp.share.top.messenger
[15] W. L. Marshall, et al., “Early onset and deviant sexuality in child molesters,” Journal of interpersonal Violence 6 (1991): 323-336, cited in “Pedophilia: The Part of Homosexuality They Don’t Want You to see,” Colorado for Family Values Report, Vol. 14, March 1994.
[16] Griffin, D. R. (2000). Religion and scientific naturalism: Overcoming the conflicts. SUNY Press.
[17] https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10221978534318704&id=1420699951
[18] https://science.sciencemag.org/content/sci/365/6456/eaat7693.full.pdf
.
লিখেছেনঃ Muhammad Atrehar Abir
by lostmodesty | Mar 17, 2019 | ব্লগ
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
পাশের বাসার নাফিস ভাই। এক ক্লাস উপরে পড়তেন। একজন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার, চ্যাম্পিয়ন। যেমন পড়াশোনায় তেমনি বিতর্ক,আবৃত্তি, গল্প লিখা, বাবা মার সাথে সুন্দর ব্যবহার। আমাদের পরিবারের কাছে তিনি সেলিব্রেটি টাইপের কিছু ছিলেন। দূর আকাশের তারা। (আমার কাছে অবশ্য ভিলেন।) উঠতে বসতে বাবা মা তাকে অনুসরণ করতে বলেন- নাফিসের মত হ, সে এতক্ষণ পড়াশোনা করে, সে দুপুরে ঘুমায় তোর মতো টো টো করে রোদে ঘুরে বেড়ায় না। মাথার চুল এতো বড় কেন তোর, শার্টের উপরের বোতাম দুইটা খোলা কেন, নাফিসের চুল দেখিস কতো সুন্দর করে কাটা। মা গিয়ে নাফিস ভাইয়ার কাছ থেকে নোট নিয়ে আসতেন,সাজেশন নিয়ে আসতেন, পারলে নাফিস ভাইয়ার পা ধোঁয়া পানি নিয়ে এসে আমাকে খাওয়ান…
মানুষের ফিতরাহ এমন সে সফলদের অনুসরণ করতে চায়। সফলরা যে পথে চলে সফলতা পেয়েছে সে পথ তাদের টানে দুর্নিবার আকর্ষণে।
পাশ্চাত্যের বস্তুগত উন্নতি দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া বিশ্ব অন্ধভাবে অনুকরণ, অনুসরণ করেছে পাশ্চাত্যকে। আগপিছ কিছু না ভেবেই ডিরেক্ট কপিপেস্ট করেছে পাশ্চাত্যের জীবনবোধ, দর্শন, রাষ্ট্র সমাজ পরিচালনা পদ্ধতি। পাশ্চাত্য যাই বলেছে যেটা করতে বলেছে আসমানী ওহীর মতো মাথা পেতে নিয়েছে বাকী বিশ্ব। যারা মেনে নিতে চায়নি, তাদেরকে জোর করে মানতে বাধ্য করা হয়েছে। কখনো পারমানবিক বোমা, কখনো ড্রোন হামলা, কখনো কুটিল ষড়জন্ত্রের মাধ্যমে পাশ্চাত্য তাদের মতবাদ চাপিয়ে দিয়েছে।
নারীদের প্রতি সহিংসতা বিশেষ করে যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ কীভাবে বন্ধ করা যায়? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে পাশ্চাত্য বলল- পুরুষের আধিপত্যশীল মনোভাব দূর করতে হবে, নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে, পুরুষের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে, নারী পুরুষের মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ মেলামেশার ব্যবস্থা করতে হবে বেশি বেশি, পতিতালয় খুলতে হবে বেশি বেশি।
সফলদের অন্ধভাবে অনুসরণ করার সহজাত প্রবৃত্তি থেকে বাকী বিশ্ব মেনে নিয়েছে এগুলো। আমল করেছে পাশ্চাত্যের ফর্মুলায়।
.পাশ্চাত্য নারীমুক্তির যে তরীকা বাতলে দিয়েছিল সেটা কোনো দেশেই কোনো স্থানেই নারীদের মুক্তি দিতে পারেনি। বরং যে দেশ যতোবেশি তাদের তরীকায় আমল করেছে সে দেশে নারীরা ততোবেশি নির্যাতিত হয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রতি ৯৮ সেকেন্ডে একজন আমেরিকানকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়, [http://tinyurl.com/k8ehojc ], প্রতি ৬ জন নারীর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৩৩ জন পুরুষের মধ্যে একজন তাদের লাইফটাইমে একবার হলেও ধর্ষণের শিকার হয়।[http://tinyurl.com/nm3gp5o ]
.মহান সভ্যতার অনুগামী আরেকদেশ অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি ছয় জন মহিলার মধ্যে একজন যৌন নিপীড়নের শিকার হন তাদের সংগী ব্যতীত অন্য ব্যক্তিদের হাতে।সংগীদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন বিবেচনায় আনলে যৌন নিপীড়নের হার নেমে আসে প্রতি পাঁচ জনে একজন।
অস্ট্রেলিয়াতে নারীদের যৌন নিপীড়নের হার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের এভারেজ যৌন নিপীড়নের হারের দুইগুনেরও বেশী।
http://tinyurl.com/ya7jlwmx, http://tinyurl.com/yafduj5j, http://tinyurl.com/y7kstly5
ইংল্যান্ড এবং ওয়ালেসের প্রতি ১৪ জন প্রাপ্তবয়স্কদের একজন বাল্যকালে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন । গ্রেট ব্রিটেন শিশু নিপীড়কদের স্বর্গরাজ্য।
https://goo.gl/9cckzW, https://goo.gl/ZFfa1E
.
আমেরিকাতে প্রতি ৪ হন নারীর একজন এবং প্রতি ৬ জন পুরুষের একজন ১৮ বছরে পা দেবার পূর্বে একবার হলেও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তারমানে এখন আমেরিকাতে ৪২ মিলিয়নের বেশী প্রাপ্তবয়স্ক আছেন যারা শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।
https://goo.gl/wmko27, https://goo.gl/9FMiuh
.
বিশ্বের যে দেশগুলোতে শিশুরা সর্বাধিক যৌন নিপীড়নের শিকার হয় সেই দেশগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও রয়েছে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড এর নাম।
https://goo.gl/b8MgJd
আমেরিকাতে প্রতি পাঁচজন নারীশিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতনের শিকার হন
[https://goo.gl/JKAccc ]
.
অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটিগুলোতেও প্রতি পাঁচ জনে একজন যৌন নিপীড়নের শিকার হন।প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।
http://tinyurl.com/ybgly3z9 http://tinyurl.com/yccfsdzd
ব্রিটেনে কর্মক্ষেত্রে অর্ধেক নারীই যৌন হয়রানির শিকার হন। [http://www.bbc.com/bengali/news-41746980 ]
.
শুধু ব্রিটেন নয়,জার্মানি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া,কানাডা,চীন,জাপান,ভারত,হংকং কোন দেশের কর্মক্ষেত্রে নারীরা নিরাপদ?
পড়ুনঃ
https://goo.gl/CkM5LO https://goo.gl/LknhGH https://goo.gl/yDWvur
দেখুনঃ
https://www.youtube.com/watch?v=KvHU5hZSGCA&feature=youtu.be
প্যারিসের পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে শতকরা ১০০ জন নারীই যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
https://goo.gl/jx1oB4 https://goo.gl/rmozJW https://goo.gl/fxyhfH
.
ইংল্যান্ড,আমেরিকা, কানাডা,ইন্ডিয়াতেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়না
পড়ুন,
আমেরিকার রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানিঃ
https://goo.gl/cMXq4k https://goo.gl/zVMKkV
.
ইংল্যান্ডের রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানিঃ
https://goo.gl/JWwb52 https://goo.gl/njUwNg
.
কানাডার রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানিঃ
https://goo.gl/HphYfF https://goo.gl/b5EvTC
.
ইন্ডিয়ার রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানিঃ
https://goo.gl/JnBhVj https://goo.gl/nRCQ5J https://goo.gl/pCWaLZ
পাশ্চাত্যের বাতলে দেওয়া সিস্টেম গ্রীসের মেয়েদের বাধ্য করেছে সামান্য একটা স্যান্ডউইচের বিনিময়ে শরীর বিক্রী করতে।
https://goo.gl/24a1hd https://goo.gl/tiuf5S
পাশ্চাত্যের নারীমুক্তি,নারীস্বাধীনতা আর নারীর ক্ষমতায়নের মুখোসের আড়ালের চেহারা উন্মোচন করে ছেড়েছে #MeToo মুভমেন্ট। হলিউড বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেত্রী, গায়িকা, সংসদসদস্য, উর্ধতন কর্মকর্তা…কেউই রক্ষা পায়নি যৌন নিপীড়নের হাত থেকে। অথচ পাশ্চাত্য বলেছিল এসব পেশা নারীর ক্ষমতায়নের উৎকৃষ্ট নমুনা। নারীরা এসব পেশার মাধ্যমে নিজেদের ইম্পাওরড (Empowered) করবে।
পাশ্চাত্য শুধু তত্ত্ব কপচিয়ে গিয়েছে কিন্তু সেই তত্ত্ব যে সফল হবে, নারীদের মুক্ত করবে সেই প্রমাণ রাখতে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই যে বছরের পর বছর জুড়ে তাদের তরীকায় বিশ্ব আমল করে যাচ্ছে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন কমেছে? আমরা কেন তাহলে পাশ্চাত্যের জীবন দর্শন নিয়ে প্রশ্ন তুলবোনা? কেন তাদের এই মাতব্বরি মেনে নিব? কোন দুঃখে আমরা এরকম ফেল্টুস এক সভ্যতার অনুসরণ করব?
কাফিরদের আকাশ ছোঁয়া দালান কোঠা, স্বর্ণ রৌপ্য, সুন্দরী নারী, সুসজ্জিত,চোখ ধাঁধানো শহর দেখে যেন মুসলিমরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে, যেন তাদের অনুসরণ করা না শুরু করে সেজন্য আল্লাহ্ (সুবঃ) সতর্ক করে বলছেন-
“নগরীতে কাফেরদের চাল-চলন তোমাদেরকে যেন ধোঁকা না দেয়। এটা (দুনিয়ার জীবনের প্রাচুর্য) হলো সামান্য ফায়দা, এরপর তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। আর থাকার জায়গা হিসেবে সেটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট”।
সুরা আলে-ইমরান, আয়াত ১৯৬-১৯৭
আল্লাহ্ (সুবঃ) কেন এভাবে সতর্ক করে দিচ্ছেন ইসলামের শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোকে? যেন কাফিরদের সুরম্য অট্টালিকা, ঝকঝকে রাস্তাঘাট, আলোয় ভেসে যাওয়া মায়াবী রাত, সাদা চামড়া, টেকনোলজি, শক্তিশালী আর্মি দেখে মুসলিমদের মনে হীনমন্যতার জন্ম না হয়। মুসলিমদের মনে যেন ভুলেও এ চিন্তার জন্ম না হয় আমরা ইসলাম অনুসরণ করছি দেখেই আজ আমাদের এই করুণ অবস্থা। ওদের মতো হতে পারলেই ওদের মত ও পথ অনুসরণ করলেই আমরা ওদের মতো সফল হয়ে যাব। আমাদেরও ওদের মতো সুউচ্চ প্রাসাদ হবে, বড় বড় ব্রিজ হবে, ফ্লাইওভার হবে, আমাদের বাড়ি হবে, গাড়ি হবে, আমরা সাদা চামড়ার মতো পটাশ পটাশ করে ইংরেজিতে কথা বলব, বার্গার পিতজা খাব, সুপার শপে ক্রেন ঠেলতে ঠেলতে আলু পটল কিনব। উফ! কী কুল কী অসাম এক লাইফ!
সফলদের অনুসরণ করার সেই চিরায়ত প্রবৃত্তি যেন আমাদের ফিতনাহয় না ফেলে দেয়।
বাইরে থেকে দেখে যতোটাই উন্নত,মহান,সুখী,সমৃদ্ধ মনে হোকনা কেন যে সভ্যতা কুফরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেটা কখনো সত্যিকার অর্থে সফল হতে পারেনা। চাকচিক্য আর প্রাচুর্যের চোখ ধাঁধানি সভ্যতার পচনকে আড়াল করতে পারেনা। পারেনা মানুষকে শান্তি দিতে।
আমরা এখানে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে শুধু যৌন নির্যাতনের ব্যাপারগুলো তুলে ধরেছি। পাশ্চাত্যের সামাজিক,পারিবারিক জীবনের হতাশা বিচ্ছিন্নতা, তরুণ তরুণীদের আত্মহত্যার হার, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ছিনতাই,লুটপাট,ডাকাতি,মানব পাচার, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করলে রাত কাবার হয়ে যাবে তবু আলোচনা শেষ হবেনা।
অনুরোধ থাকবে এই লিখাগুলো পড়ার- স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত
https://tinyurl.com/ybx2meqm https://tinyurl.com/y9wvg9dj https://tinyurl.com/y7gvpe4w
বাংলাদেশ কি এখন তার নিকট ইতিহাসের মধ্যে সবচাইতে বেশি সেকুল্যার না? সবচাইতে বেশি পাশ্চাত্যের অনুসরণ করছেনা ? চেতনা, ফ্রি মিক্সিং, ফ্রি সেক্স, পতিতা গমনের সুবিধা,লিটনের ফ্ল্যাট নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা, পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তনের চেষ্টা, বস্তুগত উন্নয়ন, ফ্লাইওভার,রাস্তাঘাট স্মরণকালের ইতিহাসের মধ্যে সবচাইতে বেশি হচ্ছে না । কিন্তু তারপরেও কেন এতো ধর্ষণ হচ্ছে। দুই আড়াই বছরের শিশুও ধর্ষণ হচ্ছে? ধর্ষণ হচ্ছে প্রৌঢ়া বা বৃদ্ধারাও
তাহলে সমাধান কী ? ধর্ষণ কীভাবে কমবে? কোন তরীকায় আমল করতে হবে?
আরবের সেই সময়টাকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়্যা- অন্ধকারের যুগ। নারীরা ছিল কেবলই ভোগের পাত্র, কন্যা শিশুদের জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো। নারীর মান সম্মান বলে কিছু ছিলনা। একটা কুকুরের যে অধিকার ছিল, নারীর সে অধিকারটুকুও ছিলনা বরবর,মদখোর রক্তপিপাসু, যুদ্ধবাজ আরবদের কাছে।
কয়েকবছরের ব্যবধানে এই আরব এমন পালটে গেল যে নারীরা একাকী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সফর করতে আসত, কিন্তু কেউ একবার চোখ তুলে তাকাতেও সাহস করতোনা। ধর্ষণ করা, যৌন নিপীড়ন করাতো দূরে থাক,চোখ তুলেও কেউ তাকাতোনা।
কিসের পরশে রাতারাতি বদলে গিয়েছিল বর্বর নারীলোভী আরবেরা? ইতিহাসকে প্রশ্ন করুন। ইতিহাস আপনাকে জবাব দিবে- আরবদের সেই পরশ পাথর ছিল বিশুদ্ধ তাওহীদ, আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ, খিলাফাহ, মিল্লাতে ইবরাহীম। কুরআনি আইন।
এগুলো অতীতের রূপকথা নয়। একদম বাস্তব। পাশ্চাত্যের মতো নারীর নিরাপত্তার জন্য কেবল এই থিওরি ঐ থিওরি কপচানো নয়, বরং বাস্তবে প্রয়োগ করে দেখানো হয়েছিল যে আসলেই শরীয়া নারীকে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রাখে। কোনো লম্পট চোখ তুলে তাকানোর সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারেনা।
আদি ইবনে হাতিম তাঈ ছিলেন আরবের তাঈ অঞ্চলের বাদশাহ। বাধ্য হয়ে আসতে হল মদীনায় এলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে । মুসলিমদের ফকিরী হালত দেখে ইসলাম গ্রহণ করতে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর ঘরের একমাত্র খেজুরের গদিতে বসালেন আদি ইবনে হাতিম তাঈকে। তারপর বললেন এমন কিছু কথা যা আমাদের সময়ের জন্য খুবই খুবই প্রাসঙ্গিক।
‘হে আদিই! নিশ্চয় তুমি মুসলিমজাতির অভাব ও দারিদ্র দেখে এই দ্বীন গ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছো। যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে তুমি শুনে নাও, আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, এমন একটি সময় খুব কাছে এসে গেছে যখন তাদের মাঝে ধন- ঐশ্বর্যের এত প্রাচুর্য হবে যে যাকাত ও সাদাকাহ নেওয়ার কোনো মানুষ থাকবেনা।
হে আদিই! মনে হচ্ছে তুমি মুসলিমজাতির সংখ্যা স্বল্পতা এবং বিরোধী ও শত্রুদের অগণিত সংখ্যা দেখে এই দ্বীন ইসলাম গ্রহণে দ্বিধাবোধ করছ। যদি তাই হয় তাহলে মনে রেখো, আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলছি, খুব শীঘ্রই তুমি শুনতে পাবে সুদূর কাদেসিয়া থেকে উটের পিঠে চড়ে একাকিনী মহিলা আল্লাহ্র ঘর যিয়ারতে আসবে। একমাত্র আল্লাহ্র ভয় ছাড়া তার মনে আর কোনো ভীতি থাকবেনা।
সম্ভবত তোমার ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা এটাও যে তুমি রাষ্ট্র ক্ষমতা ও বাদশাহী দেখতে পাচ্ছ অমুসলিমদের হাতে। আল্লাহর কসম! খুব শিগগির তুমি শুনবে এবং দেখবে যে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে । দেখবে ইরাকের বাবেল নগরীর সাদা মহলগুলো (রাজপ্রসাদা) মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে। পারস্যসম্রাট কিসরা ইবনে হুরমুজানের ধনভান্ডার তাদেরই কবজায় এসে পড়েছে’।‘
আদি ইবনে হাতিম তাঈ বলেন, ‘আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম অবাক বিস্ময়ে জানতে চাইলাম, কিসরা ইবনে হুরমুজানের সব ধন-ভান্ডার’?
তিনি জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, কিসরা ইবনে হুরমুজানের সব ধন-ভান্ডার’।
আদিই বলেন, ‘তখন আমি কালিমা-ই শাহাদাত পড়ে ইসলাম গ্রহণ করে নিলাম’।
আদিই ইবনে হাতিম দীর্ঘজীবী হয়েছিলেন। তিনি বলতেন, ‘ প্রিয় নবীর দুইটি ভবিশ্যতবাণী তো দেখেই ফেলেছি। তৃতীয়টি দেখা বাদ রয়েছে। আল্লাহর কসম করে বলছি সেটাও ঘটবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি নিজের চোখে দেখেছি, সুদূর কাদেসিয়া থেকে উটে চড়ে একাকিনী মহিলা নির্ভয়ে বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে আসে…
আমি নিজে সেই সেনাদলের অগ্রভাগে থেকে অভিযান শরিক হয়েছিলাম,যারা কিসরার ধনভান্ডার কবজা করেছিল। আমি আল্লাহ্র কসম করে বলছি, তৃতীয় ভবিশ্যত বাণীটিও ঘটবেই’।
.আল্লাহ্র ইচ্ছায় তাঁর প্রিয় নবীর ঘোষনার বাস্তবায়ন ঘটেছিল, তৃতীয় ঘোষণার বাস্তব রূপায়ন দেখা গেল পঞ্চম খলীফায়ে রাশেদ উমর ইবনে আবদুল আযীযের শাসনামলে। তাঁর আমলে ইসলামী সাম্রাজ্যে ধন-সম্পদের এত প্রাচুর্য দেখা দিল যে, তিনি সরকারি লোক মারফত পথে পথে ঘোষণা দিলেন , ‘ যাকার নেবার মতো কে আছো’?
কিন্তু একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ( সাহাবায়ে কেরামের ঈমানদীপ্ত জীবন প্রথম খনড, রাহনুমা পাবলিকেশন, পৃষ্ঠা ২২১-২২৩)
মুসলমান কেন পাশ্চাত্যের আলেয়ার পিছনে ঘুরছিস? দুনিয়ার সুখ সমৃদ্ধি, শান্তি, নিরাপত্তা, ক্ষমতা অর্জনের ম্যানুয়াল তোর চোখের সামনেই। অবহেলায় অযত্নে পড়ে আছে টেবিলের কোণায়। ধুলো মুছে একবার খুলে দেখ। শক্ত করে আঁকড়ে ধর মিল্লাতে ইবরাহীমকে।
#LostModesty #মুক্ত_বাতাসের_খোঁজে #ধর্ষণ #BanPorn
by lostmodesty | Dec 31, 2018 | ব্লগ
দশ.
সিস্টেম ওয়ার্কস। এটা দেখার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো ভালো জায়গা। আমেরিকাও এর মধ্যে অন্যতম। মানুষ এই একটি কারণে এখান থেকে যেতে চায় না। সুবিধায় অসুবিধা বোঝে না। জাগতিক সুবিধা জীবনের জন্য জরুরী। জীবন যদি এখানেই শেষ হয়ে যেত, তাহলে বেশ মজা হতো। এই মজায় যারা মজে যায়, তাদের জন্য নগদ সুবিধাই আসল। মরার পর যে জীবন আছে, সে জীবনের সুবিধা তাদের ভাবায় না।
এদেশে লাল বাতি জ্বললে গাড়ি থামে। পুলিশ না থাকলেও থামে। আবার কোথাও বাতি নাই। কেবল লেখা আছে, স্টপ। সেখানেও গাড়ি থামে। আশেপাশে তাকায়। শূন্য প্রান্তর হলেও গাড়ি চালিয়ে দেয় না। হয়তো কোনো মানুষ রাস্তা পার হবে। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করে। এমন দৃশ্য অবাক না করে পারে না। বাস-ট্রেনে লাইন ভাঙে না কেউ। ধাক্কা-ধাক্কি নেই। এটুকু শান্তি মানুষ চায়। এ শান্তির এখানে কোনো অভাব নেই। এরকম কিছু আমাদের দেশে ভাবা যায় না। এ মুহূর্তে কল্পনাও করা যাচ্ছে না। রাস্তায় চলার এই এক সুবিধা জীবনের দর্শনকেই পাল্টে দেয়। সে আর দেশে ফিরে যেতে চায় না।
সরকারী কোনো সুবিধা নিতে এদেশে কোনো ঘুষ দিতে হয় না। সিস্টেম ওয়ার্কস। লাইন লম্বা হলেও ভাগেরটা ঠিকই মেলে। ব্যাংক? গাড়ি থেকেও নামতে হয় না। সীটে বসেই সেরে নেওয়া যায় টাকা জমা ও তোলার কাজ।
এখানকার দোকানপাট আরেক জগত। জিনিস কিনে বাড়ি গেলেন। দ্রব্যটা পছন্দ হচ্ছে না। ফিরিয়ে দিন। চাইলে টাকাও ফেরত পাবেন । আপনাকে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না। এমন দেশ কে ছাড়তে চাইবে? মুসলমানদের অনেক আখলাখ তারা নিয়েছে। আমল করছে। ফল পাচ্ছে। আমরা তাদের বাহবা দেই। মনে করতে শুরু করি তাদের কাছ থেকেই মানবিকতা শিখতে হবে। সবচেয়ে বড় অমানবিক-স্রস্টাকে না মানা। আবার এটা যারা মানে, তারা এদেশে থেকে মুত্তাকী হতে পারতেন। সেখানেও সিস্টেম কাজ করে। তাকে আমেরিকান বানায়, মুত্তাকী হতে দেয় না।
এগারো.
ঘরের মানুষ ঘরে থাকতে চায় না। সবাই বাইরে বেরোতে চায়। বাইরের জগত দেখতে চায়। দু-পা ফেলে গাছের পাতায় শিশির দেখার আশা-লুকাতে পারে না। শীতের সকালে দেখে। গ্রীস্মেও। বেলায়-বেলায় সবসময়য় কি পাতায় শিশির থাকে? মানতে চায় না। ওখানে এখন শিশির নেই। যেও না। ঠেকানো যায় না। সে নিজে পরখ করতে চায়। না থাকলেও সে যাবেই। আকাশে মেঘ গর্জন করছে। গর্জন কানে লাগে না। বৃষ্টিতে ভেজে একাকার হয়ে বাড়ি ফেরে। ফিরতেই হয়। না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে যাওয়া-আসার মধ্যেই সে থাকে। নারী-পুরুষ সবাই। ছেলে-মেয়েরাও। আঠারোর পরে আর কাউকেই এখন ঘরে রাখা যায় না। সবাই সব অধিকার ভোগ করে মজা নিতে চায়। সরকারও সেগুলো দিয়েছে। আইন করে নিশ্চিত করেছে। যিনি এ স্বাধীনতা দেননি, তার কথা মনে থাকে না।
আমেরিকায় এসে প্রায় সব পুরুষই নারীবাদী হয়ে ওঠে। নারীদের অধিকার দিতে উঠেপড়ে লাগে। আর তাদের প্রথম অধিকার হলো কামাই করার সুযোগ দেওয়া। মাইগ্রেন্ট করা মুসলমানদের অনেক পরিবারে শিক্ষিত নারী থাকে। আবার অনেকের এদেশে এসে আর পড়ালেখা করার সুযোগ থাকে না। বয়স হয়ে গেছে। অথবা ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। কিন্তু চাকুরী করানোর সুযোগ তারা খুব কমই মিস করে। ব্যস, তারপর তাদের আর নারীবাদী তত্ত্ব নিয়ে সংশয় থাকে না। মৌলবাদী ধ্যান-ধারণার মানুষও নারীবাদী হওয়াতে দোষের কিছু দেখে না।
নারীবাদী কথাটা নারীদের আবিষ্কার নয়। পুরুষদের। চার্লস ফোরিয়ার (Charles Fourier) এই শব্দটির জনক। ফ্রান্সে ১৮৩৭ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়েছে। নারীরা যদি ঘরেই থাকে, তাহলে তাদের ভোগ করার সুযোগ মিলবে না। সুতরাং একটা ধোঁয়া তুলে তাদের রাস্তায় বের করতে হবে। সম অধিকারের কথা বলতে হবে। উন্নতির কথা বলতে হবে। আধুনিকতার কথা বলে গণহারে তাদের চাকুরী দিতে হবে। হলোও তা-ই। নারীরা বের হলো। আগে কোনো ধর্মের নারীরা এত খোলামেলা ছিল না। এখন যখন ধর্ম ফেলে উন্নতির জোয়ার লাগল, তখন আর বাঁধ মানল না। বের হয়ে একেবারে নিজেদের উজাড় করে দিল। প্রযুক্তি তাদের ভোগপণ্য বানিয়ে ফেলল। যদিও বলা হয়, এটা আধুনিক সংস্কৃতি। মূলত এর মাধ্যমেই তাদের বেহায়াপনার শুরু। এখান থেকেই বাকি অবরুদ্ধ জায়গাগুলোতে পৌঁছে। মুসলমান নারীরাও আর ঘরে থাকতে পারল না।
এদেশে নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে। আমাদের দেশেও করে। এখন গ্লোবাল কালচারে এটা আলোচ্য বিষয় নয়। মূল সমস্যা পর্দার কনসেপ্ট পাল্টে গেছে। জিন্স আর টি শার্টের সঙ্গে মাথায় হিজাব দিলেই পর্দা হয়ে গেল। ধুমধাম পার্টি আর পুরুষদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশায় অসুবিধা দেখেনা কেউ। কিছু বললেই তেড়ে আসে। এসব মাসআলা এদেশে বেকার। নাচতে নেমে কেউ ঘোমটা দেয় না। ঘোমটা দেওয়ার কথা বলাটাই অন্যায়। নাচ থামাবেন, না ঘোমটা দেওয়ার কথা বলবেন? আসলে ঈমানই অন্তরে থাকেনা। ঈমানের প্রসঙ্গ তুললেও বিপদ। তারা নামায পড়ে। রোযা রাখে। ইফতার পার্টিও দেয়। এই এক মেলানো-মেশানো কালচার চলছে। বেঁচে থাকতে হলে অনেক কিছুই করতে হয়। আস্তে আস্তে পরিবর্তন হবে। সেটা এতই আস্তে যে, মরে গেলেও আর হয়না। কামিজ ছেড়ে যে মহিলা জিন্স পরে,তার কাছে ঈমানের সংজ্ঞা ডিফারেন্ট। তাকে ঘরে ফেরানো মুশকিল।
এভাবে ঘর ছাড়া নারীরা বাইরের রোদ্দুরে গা পুড়িয়ে ঘরে ফেরে। একদিন বুড়ো হয়। তখন ভোগ করতে পারে,না ভোগের পাত্র থাকে! ফেলে আসা শৈশব মনে পড়ে। হুযুরদের কথা মনে উঁকি দেয়। মা-বাবারা স্মৃতিও ভেসে ওঠে। কী লাভ হলো এতোসব করে ? গাড়ি-বাড়ি আর বিলাসিতায় সব পড়ে থাকে এক কোণে। এখন ফেরার সময়। যিনি এ জীবন দিয়েছিলেন, তার কাছে ফিরে যেতে হবে। একা একা সেসব স্মৃতি মাড়িয়ে যেই একটু ভালো হতে চায়, শরীরের হাড়-গোড় মুচড়ে ওঠে। মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। সুযোগও মেলেনা।
বারো.
মানুষ আশা করে। স্বপ্ন দেখে। একটু ভালো থাকতে চায়। কাজ আর আনন্দ নিয়ে থাকতে চায়। নিরিবিলি কাটাতে চায় আলস্যের সময়। ঝামেলায় জড়াতে চায় না। পাশ্চাত্যে এগুলো পেতে স্বপ্ন দেখতে হয় না। এমনিতেই মেলে। কেউ কারো পেছনে লেগে নেই। যে যার কাজ করছে। সামাজিক নিয়ম-কানুন ছকে বাঁধা । সব ঘড়ির কাঁটায় চলে। মানুষও। ঝামেলা যে হয় না, তা না। চুরি,ডাকাতি,খুন-খারাবি সবই হয়। এগুলো না থাকলে ভালো এত ভালো হতো না। এর মূলে কাজ করে এদেশের এডুকেশন সিস্টেম। ভারী বোঝা এরা এত হালকা করে বহন করতে জানে, সিস্টেমে না ঢুকলে বোঝা যায় না।
আমাদের দেশে শিশুদের উপর প্রথমে ভারী বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তারা যখন বড় হয়, তখন সেগুলো মাথা থেকেই ফেলে দেয়। সমাজ অন্ধকারে যেতে থাকে। আলোর মুখ দেখে না। সেক্যুলার হয়েও পাশ্চাত্যের ভালো কিছু নিতে পারেনা। কিন্তু খারাপ নিতে ভুল করে না। আমেরিকান এডুকেশান সিস্টেমের মন্দ দিকটা সবাই জানে। ভুক্তভোগী অনেক মুসলমানও সেসব নিয়ে কথা বলতে চান না।
পড়ালেখা করতেই হবে। বড় হতে হলে এর বিকল্প নেই। কত বড় হবে তুমি? এটা কারো জানা থাকেনা। টার্গেট থাকে। মজার ব্যাপার হলো এদেশে ছেলেরা ফায়ারম্যান হতে চায়। গারবেজম্যান হতে চায়! সুপারম্যানও হতে চায়। চাইতেই পারে। মিডিয়াতে যা দেখে, তা-ই হতে চায়। এডুকেশন সিস্টেম এমন ,ইলেভেন ক্লাস না পেরোনো পর্যন্ত তার চাওয়া থামে না। তারপর যারা টিকে যায়, তারা সোসাইটিতে আগে বাড়তে পারে। উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে। এ পথ পরিক্রমা খুব সহজ না। মাল্টিকালচারে পড়ালেখা তার মেধা-মননে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। বড় কিছু হতে শেখায়। তবে রিলিজিয়ন নিয়ে ভাবতে শেখায় না।
এদেশে রাস্তাঘাট যেমন সুন্দর,তেমন স্কুল কলেজও। খুবই প্রশস্ত জায়গা নিয়ে বানানো। খেলার মাঠ ছাড়া কোনো স্কুল নযরে পড়েনি। শারীরিক ফিটনেস পড়ালেখার অংশ। খেলাচ্ছলেই ছেলেমেয়েদের পড়ানো হয়। খুবই ইফেক্টিভ। তুলনামূলক পাবলিক স্কুলে পড়া সহজ। খরচ কম। মাইগ্রেট করা অনেক মুসলমান ছেলে –মেয়েদের প্রথমে এখানেই হাতে খড়ি হয়। তারা যা দেখে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। কালচার ভেবে লুফে নেয়। তাকেও জাতে ওঠার চেষ্টা করতে হয়। তখন তারা পাত ভুলে যায়। খুব আস্তে আস্তে সে আমেরিকান হয়ে ওঠে। বাবা মা টের পায় না।
নাইন-টেন ক্লাসেই অনেক মেয়ে কনসিভ (Conceive) করে। মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড, আর ছেলেদের গার্লফ্রেন্ড বাড়তে থাকে। সমকামিতাও বাড়ে। সমাজে এটা নিয়ে হৈচৈ হয় না। অগোচরে সম্পর্ক গড়ায় অনেক দূর। সেক্স বিষয়টা তাই পুরোনো আদলেই থাকে। আর রিলিজিয়ন বাসা-বাড়িতে আগে বাড়লেও স্কুল কলেজে বাড়ে না। আমেরিকান বানাতে চাইলে এটা ধরে রাখতেই হবে। সরকার এই একটা জায়গায় যা খেলার খেলে। মুখে কিছু বলে না। এজন্য বাবা-মা ধার্মিক বা মৌলবাদী হোক, তাতে অসুবিধা নেই। সরকার তাদের নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। তাদের সন্তানই টার্গেট। জেনারেশন কিল (Kill) করতে এর চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই।
এদেশে ইসলামী এডুকেশন সিস্টেমও আছে। মসজিদ কেন্দ্রিক স্কুল। সব শহরে এখনো গড়ে ওঠেনি। অনেক শহরেই আছে। মুসলমানদের জন্য একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ার সুযোগ করে দিয়েছে এ স্কুলগুলো। উচ্চ শিক্ষার দ্বার খোলা রেখেই এর কারিকুলাম বানানো হয়েছে। এর ফলে ইসলামী কৃষ্টি কালচারের চর্চা হয়। অনেকে হাফেজও হয়। তবে ধরে রাখাটা সহজ হয়না । ইউনিভার্সিটিতে গেলে তারা তখন মূল ধারায় ফিরে আসে। যাদের ভাগ্য ভালো, তারা নিজেদের বাঁচিয়ে চলে। আর নতুবা গা ভাসিয়ে দিয়ে, সত্যিকার আমেরিকান হয়ে ওঠে।
মুসলমান পরিবার কখনো পরবর্তী জেনারেশন হারাতে চায় না। পরিবেশের জন্য ঠিক রাখতেও পারেনা। বেঠিক চলতে চলতে আশার আলো দেখে সবাই। একদিন হয়তো জাগরণ হবে। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। সেদিন কবে আসবে? [১]
তেরো.
রাত ১১:৫৯ এ ফ্লাইট। টার্কিস এয়ারলাইনস। মইন ভাই এয়ারপোর্টে নিয়ে গেলেন। আমি এক নিঃসঙ্গ মানুষ আমেরিকা থেকে একা একা ফিরছি। আসার সময় প্রফেসর হযরত বার বার বলেছেন, ‘ একাই যাচ্ছ?’ ফেরার সময় যখন কথা হলো, তখনও বললেন, ‘তুমি তো একাই ফিরছ না?’ আমি তবু ফিরছি। মইন ভাই ফিরতে পারছেন না । না স্ত্রী -কন্যার কাছে, না নিজের দেশে। তিনি ফিরে যাবেন বাফেলো। আবার ছয়-সাত ঘন্টা ড্রাইভ। একাই।
পৌনঃপুনিক নিঃসঙ্গের দেশ আমেরিকা। সব থেকেও তারা খুব একা। আর যাদের কেউ নেই, তাদের অবস্থা আরও করুণ। নিঃসঙ্গের মাত্রা মাপা যায়না, তবু জীবন এগিয়ে চলে। মরুভূমিতে পথ হারালে ফেরা যায়না। আমৃত্যু অপেক্ষা মৃত্যুর জন্য। আকাশে উড়াল দিয়ে আমি বাহ্যিকভাবে সেই মৃত্যুকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম।মৃত্যুকে পেছনে ফেলা যায়না।
আমাদেরও যেতে হবে এবং একাই![২]
চলবে ইনশা আল্লাহ…
পড়ুন আগের পর্বগুলোঃ
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (প্রথম পর্ব)
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (দ্বিতীয় পর্ব)
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (তৃতীয় পর্ব)
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (চতুর্থ পর্ব)
স্বর্গের দিন! স্বর্গের রাত! (পঞ্চম পর্ব)
আরো পড়ুনঃ
মুখোশ উন্মোচনঃ প্রথম পর্ব
মুখোশ উন্মোচনঃ তৃতীয় পর্ব
নরক –
রেফারেন্সঃ
[১] একা একা আমেরিকা, পৃষ্ঠা ৮২-৮৮, লেখকঃ মুহাম্মাদ আদম আলী, সাবেক মেরিন অফিসার, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল ফুরকান
[২] একা একা আমেরিকা, পৃষ্ঠা ১১২-১১৩, লেখকঃ মুহাম্মাদ আদম আলী, সাবেক মেরিন অফিসার, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল ফুরকান
by lostmodesty | Dec 31, 2018 | ব্লগ
পাঁচ.
আমেরিকা একটা অদ্ভুত জায়গা । এখানে পাগলের সংখ্যা অনেক। এ পাগল গাড়ি চালায়। স্মার্টফোনে কথা বলে। কাজ করে। খায়। দেখে বোঝার উপায় নেই। কথা বললেই বুঝে আসে। কথার খেই পাওয়া যায় না। কখন যে পাগল হয়ে গেছে, সে নিজেও জানে না। তাদের বাড়ি থেকেও নাই। পরিবার থাকলেও কাছে পায়না। সব হারানোর কষ্টে একসময় এরা বদ্ধ পাগল হয়েই যায়। এরকম এক পাগলের বাসায় রাতের দাওয়াত ছিল। সজিব জোর করলো। গেলাম। খাচ্ছি। খাওয়ার টেবিলে বসেই তিনি তার মেয়েকে বিদায় দিলেন। যাচ্ছে ফ্রাইডে নাইটে। আমাকে বললেন,‘ ওর এক বন্ধুর বার্থেডে পার্টিতে যাচ্ছে’।
এসব পাগলারা সত্য বলতে পারে না। এজন্যেই বুকের কষ্ট মাথায় ওঠে। নার্ভগুলো সব উলটে দেয়। যা দেখে, ভুলে থাকে। যা শোনে, চেপে যায়। কত আর আমেরিকান হয়ে থাকা যায়! ইসলামের কিছু বোধ তখনো তাড়া করে ফেরে। যুবতী মেয়ে সারা রাত আর বাসায় ফেরে না। বাবা-মা নির্ঘুম জেগে থাকে। রাতের পর রাত। এমন কয়টা রাত লাগে পাগল হতে’? [১]
ছয়.
চাচা এদেশে সাঁইত্রিশ বছর ধরে আছেন। মিলিয়ন ডলারের কয়েকটি বাড়ি আছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। খুবই ধনী। এত ধন তার তেমন উপকার করেনি। তিনটি মেয়ে। বড় মেয়েটা ভার্সিটি শেষ করে চাকুরী করেছে। এক হিন্দু বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘোরে। এজন্য চাচার মন ভালো থাকেনা। বয়স হয়ে গেছে। বাঁচার আশাও আর বেশি দেখেন না। সম্পদ সব বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন। বিক্রি করে কি করবেন জিজ্ঞেস করিনি। বেশি কথা বলা যাচ্ছে না। তিনিই কথা বলে যাচ্ছেন। পরে ভাব করে কথা বলতে হবে। গাড়ি চলছে।[২]
সাত.
আজ এখানে ২৫ ডিসেম্বর । খৃস্টানদের বিশেষ দিন। তারিখটা উল্লেখ করলাম। দিবসের কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। মুসলমানরা এখানে খৃস্টানদের পাশাপাশি কাজ করে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। শুভেচ্ছা জানাতে হয়। এজন্য হাসি-মুখে অনেকে বলে ফেলেঃ হ্যাপি ক্রিসমাস ডে। আমি শুনে ঘাবড়ে যাই। এ কথা বললে তো ঈমান থাকার কথা না। ব্যাপারটা কোনো আলেমকে জিজ্ঞেস করতে হবে।[৩]
আট.
নিউইয়র্কে আকাশ ছিল অনেক উপরে। উঁচু বিল্ডিং-এর ফাঁক গলে আকাশ দেখতে হতো। ডালাসে আকাশ অনেক নিচে। সোজা তাকালেই দৃষ্টি চলে যায়। দেশের শষ্যভরা ক্ষেত যেমন,মাইলের পর মাইল দিগন্ত বিস্তৃত, তেমন। আকাশ আকাশেই থাকে। শুধু মনের আকাশটাই ওঠানামা করে!
ডালাসের এই অঞ্চলে শষ্য-ক্ষেত নেই। তবে বাড়ি ঘর ছড়ানো ছিটানো। এত বিস্তৃত জায়গা, দৃষ্টিতে আটকায় না কিছুই। সোজা আকাশের নিঃসঙ্গতায় হারিয়ে যায়। রাস্তাঘাটে মানুষজন চোখে পড়েনা। ঘর-বাড়ির বাইরেও কেউ নেই। আবাসিক এলাকা যেন বিরান ভূমি। এখানে প্রতিটি মানুষ এরকম একা, নিঃসঙ্গ। সব থেকেও কেউ নেই।
ঘরের লোকজনও ঘরে থাকে না। কাজে থাকে। সবাই কাজে মগ্ন। ভালোবাসা আর খাওয়া-দাওয়া। জীবনের অংশ নয়। কাজের অংশ। কাজ মানেই টাকা। এজন্য ভালোবাসাও টেকে না বেশি দিন। টাকা না হলে জীবনও মরে যায়। মরা জীবনে ইসলাম এককোণে পড়ে থাকে। যখন পাশ দিয়ে যায়, ছুঁয়ে দেখে। দূরে গেলে ভুলে যায়।
ফজর পড়েছি মসজিদে। গেইট দিয়ে বের হতেই একটা বাক্স চোখে পড়ল। বাক্সের ওপর লেখাঃ Bank of Akherah (আখেরাতের ব্যাংক) ইন্টারেস্টিং । এরকম এখনো দেখিনি দেশে। মসজিদে এলেই ভালো লাগে। দ্বীনদারি কিছু চোখে পড়ে। বাইরে এর ছাপ কোথাও নেই। আযানও মসজিদের চার দেয়ালে আটকে থাকে।
এখনকার ইয়ং জেনারেশনের খোঁজখবর নেওয়া মুশকিল। বাবাদের দেখা পেলেও সন্তানদের দেখা মেলে না। আমার ভাতিজাদের দেখে কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। তাদের এখন স্কুল বন্ধ। সারাক্ষণ পাশে পাচ্ছি। একবার তাদের এক বন্ধু এল। একসাথে নামাযে যাব। তারপর জিমে খেলবে। গাড়িতে উঠতেই পরিচয় হলো। নাম হিশাম । মুসলমান। এদেশে জন্ম। বাবা শ্রীলংকান, আর মা মালয়েশিয়ান । পুরো আলখেল্লা পরে নামায পড়লো। ভালো লাগলো।
নামায শেষে তাদের জিমে ড্রপ করতে হবে। আবার কিছু সময় পাওয়া গেল। এই সুযোগে তার কুরআন পড়া শুনতে চাইলাম। সূরা ফাতিহা পড়তে বললাম । ছেলেটা জবাব দিল, ‘ আমার দাঁতে ব্যথা। কুরআন পড়তে পারব না’।
আমি শুনে অবাক হলাম। কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে না। কুরআন পড়লে অসুবিধা হবে। এর মানে আমার বুঝতে বাকি থাকে না। চুপ মেরে গেলাম। পরে আমার ভাতিজা আমাকে বলেছেন, ‘তুমি তার কাছে কুরআন পড়া কেন শুনতে চেয়েছোঁ? সে মাইন্ড করেছে’। আমি তাকে আর কি জবাব দেব! এখন তার প্রতিও আমার ভয় বেড়ে গেল। আমরা বড় বেশি সেকেলে হয়ে গেছি! [৪]
নয়.
রিহেবিলিটেশন সেন্টারটা একটা কারাগার। এ কারাগারের কোনো পাহারাদার নেই। বিছানায় লেপ্টে থাকা রোগীদের জন্য এর প্রয়োজনও নেই। পরিচিতজনরাও কম আসে। এদেশে এমনিতে পরিবারের বন্ধন ঠিক থাকেনা। বাবা-মা, ভাই-বোন – একসময় সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সবাই সবার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। রোগী দেখার সময় পায় না।
হাসপাতালগুলোও এ কালচার মেনে চলে। রোগীর সঙ্গে কেউ না থাকলে অসুবিধা হয়না। পুরো দায়িত্ব তারা কাঁধে তুলে নেয়। দায়িত্বেরও সীমা থাকে। অকেজো মানুষদের সেবা করা কঠিন কাজ । নার্সরাও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এজন্য এখানে এলে বাঁচতে চায় না কেউই। আমরা যখন ফিরছিলাম, তখন এক ঘর থেকে আওয়ায আসছে, Help! I need help ! তার এ চিৎকার কেউ শুনছে না । হেলপ! হেলপ ! চিৎকার চলছে।
পড়ুন আগের পর্বগুলোঃ
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (প্রথম পর্ব)
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (দ্বিতীয় পর্ব)
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (তৃতীয় পর্ব)
স্বর্গের দিন স্বর্গের রাত (চতুর্থ পর্ব)
আরো পড়ুনঃ
মুখোশ উন্মোচনঃ প্রথম পর্ব
মুখোশ উন্মোচনঃ তৃতীয় পর্ব
নরক –
রেফারেন্সঃ
[১] একা একা আমেরিকা, পৃষ্ঠা ১০২, লেখকঃ মুহাম্মাদ আদম আলী, সাবেক মেরিন অফিসার, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল ফুরকান
[২]একা একা আমেরিকা, পৃষ্ঠা ৯৮, লেখকঃ মুহাম্মাদ আদম আলী, সাবেক মেরিন অফিসার, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল ফুরকান
[৩]একা একা আমেরিকা, পৃষ্ঠা ৫৮, লেখকঃ মুহাম্মাদ আদম আলী, সাবেক মেরিন অফিসার, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল ফুরকান
[৪] একা একা আমেরিকা, পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭, লেখকঃ মুহাম্মাদ আদম আলী, সাবেক মেরিন অফিসার, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল ফুরকান
[৫] একা একা আমেরিকা, পৃষ্ঠা ৭০, লেখকঃ মুহাম্মাদ আদম আলী, সাবেক মেরিন অফিসার, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল ফুরকান